ফিলিস্তিনে আমাদের ভাই-বোনদের উপর সুদীর্ঘ ৭৫ বছর অবধি ইসরাইল কর্তৃক যে অত্যাচার এবং নির্যাতন চালানো হচ্ছে, মুসলিম হিসেবে তা দেখে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হবে এটাই স্বাভাবিক । এই পরিস্থিতিতে তামাম পৃথিবীর সকল মুসলমানের উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য ছিল এই জালিম নরপশুর বিরুদ্ধে মজলুম মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু রাষ্ট্রীয় এবং ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের জন্য তা সম্ভব হয়ে ওঠেছে না। তাই একরকম বাধ্য হয়েই আমাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে ইসরাইলকে এবং জায়নবাদীদেরকে পঙ্গু করার জন্য পণ্য বয়কটের পন্থা অবলম্বন করতে হয়। সারা বিশ্বব্যাপী ইসরাইল বা জায়নবাদিদের বিরুদ্ধে বয়কট এবং নিষেধাজ্ঞার আন্দোলন বাস্তবেই খুব কাজে দিচ্ছে( যার বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসবে ইনশাআল্লাহ )। এই বয়কট আন্দলোনে মুসলিম হিসেবে আমাদেও অংশগ্রহন করা ঈমানী চেতনার দাবী।
তার মানে এই নয় যে, যাচাই বাঁচাই ছাড়া যে কোন কোম্পানিকেই বয়কট করে ফেলব। এমনটা করা বুদ্ধিমানের কাজও নয় । তাই এই হুজুগেপনা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসাতে হবে। তা হতে হবে সুনির্দিষ্ট এবং সুপরিকল্পিত। কোন রকম তথ্যের নিশ্চয়তা ছাড়া একজন ইসরাইলি পণ্যের একটা লিস্ট ধরিয়ে দিল আর আমি হুমড়ি খেয়ে পরলাম। ফেসবুকে, ইউটিউবে, ব্যানারে, প্ল্যাকার্ডে, হ্যান্ডবিলে, সবজায়গায় ছড়িয়ে দিলাম সাথে অন্য কেউ ব্যবহার করলে তাকেও তিরস্কার করা শুরু করে দিলাম। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেল ইসরাইল-ফিলিস্তন যুদ্ধের জন্য এই কোম্পানি সরাসরি তো দুরের কথা দূরতম কোন সম্পর্কের কারণেও দায়ী নয়। এটা সচেতন কোন মুসলিমের কাজ নয়। এই ধরণের লোকদের জন্যই আসলে কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
اَلَّذِیۡنَ ضَلَّ سَعۡیُہُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَہُمۡ یَحۡسَبُوۡنَ اَنَّہُمۡ یُحۡسِنُوۡنَ صُنۡعًا
তারা সেই সব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সমস্ত দৌড়-ঝাঁপ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, অথচ তারা মনে করে তারা খুবই ভালো কাজ করছে। সূরা কাহাফ-১০৪
নাবী কারীম ﷺ ইরশাদ করেন,
, كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ কোনও ব্যক্তি মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তাই বলে বেড়ায়। মুসলিম শরীফ-৩৫০
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নিত্য প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে এমন কোন কোম্পানিকে বয়কট করা কিন্তু খামখিয়ালি কোন কথা নয়। অনেক কষ্টের বিষয়। তাই বয়কট করা যেরকম দরকার ঠিক তেমনি তা কার্যকরী এবং বাস্তব সম্মতও হওয়া দরকার।অযথাই কষ্ট করে গেলাম কাজের কাজ কোন কিছুই এমনটা যেন না হয়।
আর ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যু দুই তিন দিনে সমাধান হওয়ার মতো কোন বিষয় নয়। বরং কোরাআন- হাদিসের ভাষ্য এবং ইতিহাস আমাদেরকে বলে তা দীর্ঘ কাল পর্যন্ত চলতেই থাকবে। যার সাথে সাথে বয়কটের আলোচনাও বারবার সমনে আসতে থাকবে। এই বিষয়টিকে সামনে রেখেই মানুষকে বিভিন্ন রকমের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করে সত্য তথ্য তুলে ধরতে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
আলোচনায় আমরা এক একটি কোম্পানিকে ধরে ধরে আলোচনা করব। যদি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে আমাদের মানদন্ডে বয়কটের আওতায় পড়ে তাহলে কি কি কারনে তাকে আমরা বয়কট করব আন্তর্জাতিক বিভিন্ন তথ্য সূত্রের বরাতে আমরা সে কারণগুলোও এখানে একে একে তুলে চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। আর যদি বয়কটের আওতায় না পারে তাহলে কি কি কারনে সেটাকে আমরা বয়কট করবো না তাও বিশ্লেষণ করব সবিস্তারে। وما توفيقي ٳلا بالله
(ধারাবিহিক আলোচনা চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।)
আগামীকালের আলোচনায় আমরা দুইটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
১) ইসরাইল বা জায়নবাদিদেরকে আমাদের এই বয়কট আন্দোলন আসলে কতটা চাপে ফেলেছে? (সাথে থাকবে জায়নিস্টদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়,মিশন এবং তাদের তালিকা।)
২)ইসলামী শরীয়তে এই পণ্য বয়কটের অবস্থান কি?
দোয়ার দরখাস্ত রইল আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই ক্ষুদ্র মেহনতকে কবুল করেন এবং সহজ থেকে সহজতর করে দেন।
লেখকঃ মোহাম্মাদ মারুফ বিল্লাহ
শিক্ষার্থীঃমারকাযুল বহূস আল ইসলামিয়া ঢাকা।
মুহাদ্দিসঃ দারুল উলূম ফজলিয়া কওমিয়া মাদ্রাসা,পদ্মা সেতু ,শরিয়তপুর।
0 মন্তব্যসমূহ