বাংলাদেশে ইসরাইলি
পণ্য
আসলে সত্য বলেতে কি বাংলাদেশে
ইসরাইলি পণ্য প্রস্তুতকারী কোন কোম্পানি যেমন নাই ঠিক তেমনি ইসরাইলের প্রস্তুতকৃত
পণ্য রপ্তানি কারক কোন প্রতিষ্ঠানও নাই।
কারণ, বাংলাদেশ এবং ইসরায়েলের মাঝে কোন ধরনের কূটনৈতিক এবং
বাণিজ্যিক সম্পর্ক নেই। (যদিও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সামান্য কিছু ব্যবসা-বানিজ্যের
প্রমান পাওয়া যায়।)
(যাচাইকৃত
) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত ইসরায়েলকে নৈতিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার
করে না। পৃথিবীর প্রায় ১৯২ টি রাষ্ট্রের মধ্যে ৩০ টি রাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত
ইসরাইলেকে স্বীকৃতি দেয়নি বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। তাই বাংলাদেশী নাগরিকদের
ইসরায়েলে ভ্রমণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট ইসরায়েল ব্যতীত
বিশ্বের সকল দেশ ভ্রমণের জন্য বৈধ। বাংলাদেশের পাসপোর্টে আগে লেখা ছিল
This passport is valid for all the countries of the world except Israel(এই পাসপোর্টটি ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সকল দেশের জন্য প্রযোজ্য।)
২০২০ সালের দিকে বাংলাদেশের
পাসপোর্ট থেকে except Israel এই বাক্যটি উঠিয়ে দেওয়া হয়।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপ-মহাপরিচালক গিল্যাড কোহেন, "বাংলাদেশ ইসরায়েলের উপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে
নিয়েছে" এমন টুইট করার পর এই তথ্যটি প্রকাশ্যে আসে। সে টুইটে(বর্তমান এক্সে)
লিখে
“Great news! Bangladesh has removed a travel ban to Israel. This is a welcome step and I call on the Bangladeshi government to move forward and establish diplomatic ties with Israel so both our peoples could benefit and prosper,”
"গুরুত্বপূর্ণ খবর! ইসরায়েলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। এটি একটি স্বাগত পদক্ষেপ এবং আমি বাংলাদেশ সরকারকে এগিয়ে যাওয়ার এবং ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার আহ্বান জানাচ্ছি যাতে আমাদের উভয় দেশের জনগণ উপকৃত ও সমৃদ্ধ হতে পারে।(আল-জাযিরা ইংরেজী থেকে নেওয়া)
ইসরাইল ২০২১ সালে ইসরাইল আবার ফিলিস্তিনে
নৃশংস হামলা চালালে বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু এই বাক্যটি পুনর্বহাল করার জন্যক।তখন
সাংবাদিকরা তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন,
"পাসপোর্টের পরিবর্তনটা আন্তর্জাতিক নিয়মের জন্য করা হয়েছে। এতে কোনোভাবেই ইসরাইলের উল্লসিত হওয়ার সুযোগ নেই। ইসরাইলের সঙ্গে আমাদের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, ভবিষ্যতেও কোনো সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। একই সঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ইসরাইল সফর নিষিদ্ধ থাকবে। পাশাপাশি ইসরাইলিদের জন্যও পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসা বন্ধ থাকবে। সুতরাং আমাদের যে নীতি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, ইসরাইলি আগ্রাসনের মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ নিয়মিতভাবে ইসরাইল সংঘটিত করে আসছে, সেটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যে অবস্থান সেটি একই জায়গায় আছে। বরং সম্প্রতি ইসরাইলের পক্ষ থেকে যেভাবে হামলা পরিচালনা করা হয়েছে, এতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সংহত হয়েছে এবং বাংলাদেশ প্রতিবাদও জানিয়েছে।"
২০০৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশী
সাংবাদিক সালেহ চৌধুরীকে ইসরায়েলে প্রবেশের চেষ্টার দায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড
প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সমর্থন করে এবং
ইসরায়েলের “অবৈধভাবে
ফিলিস্তিনের ভূমি দখলের” সমাপ্তির দাবি করে আসছে।
বাংলাদেশের সাথে
ইসরাইলের গোপন বানিজ্য
বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র
যেটি ইসরায়েলের সাথে সকল প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বাণিজ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা
জারি করেছে, যদিও
উভয়ই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র।
বাংলাদেশি গণমাধ্যমগুলো বিষয়টি
হালকাভাবে নিয়ে কোন রকমের বিস্তারিত গবেষণা না করলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো
কিন্তু বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সাথে দেখেছেন এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে যাচাই বাঁচাই
করার চেষ্টা করেছেন, বাংলাদেশ
কি আসলেই ইসরাইলের সাথে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক সহ সব ধরণের আচরণে শিথিলতা আনতে
চাচ্ছে কিনা? আল-জাযিরার
প্রতিবেদনে শেষ
পর্যন্ত এমনটাই উঠে এসেছে। যার নিশ্চয়তা আমরা নিম্নক্ত ইসরাইল-বাংলাদেশের
ব্যবসায়িক পরিসংখ্যান থেকেও পরিষ্কার বুঝে নিতে পারি। প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে
দাবি করা হয়,
ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে নীরবে। প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকসহ কিছু পণ্য রপ্তানি হচ্ছে এবং তা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা দুবাইয়ের মতো তৃতীয় দেশ হয়ে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা পণ্য পাঠিয়ে থাকে সিঙ্গাপুর বা দুবাইয়ে। পণ্যমূল্যও পরিশোধ করা হয় সিঙ্গাপুর বা দুবাই থেকে। ফল লেনদেনটি বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর বা দুবাইয়ে রপ্তানি হিসেবে গণ্য হয়। আর সিঙ্গাপুর থেকে যে কোম্পানি এই পণ্য আমদানি করে, সেটি মূলত ইসরায়েলের কোনো কোম্পানির শাখা বা প্রতিনিধি অফিস। তারা এই পণ্য সিঙ্গাপুর থেকে মাদার ভেসেলে তুলে দেয় ইসরায়েলের হাইফা বন্দরের উদ্দেশে। বিষয়টি অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট।’
বাংলাদেশ থেকে ইসরায়েলে পণ্য রপ্তানির বিষয়টি প্রতিফলিত হয় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে। এতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে প্রায় ৫ লাখ ডলারের পণ্য ইসরায়েলে রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১ লাখ ১৮ হাজার ডলারের পণ্য। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫৭ ডলারের পণ্য। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ২৮ হাজার ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ থেকে ইসরায়েলে বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক, ওষুধ ও বিবিধ পণ্য রপ্তানি হয় বলে ইপিবির পরিসংখ্যান দেখায়।
ইপিবির পরিসংখ্যানে ইসরায়েলে পণ্য রপ্তানির বিষয়টি স্বীকৃত হলেও বাংলাদেশে ব্যাংকের কোনো পরিসংখ্যানে এটি পাওয়া যায় না। আবার ইপিবির পরিসংখ্যানে যে চিত্র উঠে আসে, তা-ও আংশিকমাত্র। কেননা, সিঙ্গাপুর বা অন্য কোনো দেশ থেকে যখন রপ্তানির টাকা চলে আসে, তখন তা ওই দেশ থেকে উৎসারিত বলেই হিসাবের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়।
তবে ইসরায়েলে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ইন্টিগ্রেটেড ট্রেড সলিউশন (ডব্লিউআইটিএস) তথ্যভান্ডার থেকে যে উপাত্ত পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ইসরায়েলে প্রায় ৩৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির যে তথ্য ইসরায়েল প্রদান করেছে, তার ভিত্তিতে ডব্লিউআইটিএস এই পরিসংখ্যান প্রস্তুত করেছে, যার সঙ্গে ইপিবির পরিসংখ্যানের আকাশ-পাতাল ফারাক। অন্যদিকে ডব্লিউআইটিএসের তথ্যভান্ডার থেকে এটাও জানা যায় যে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশ ইসরায়েল থেকে প্রায় ৩৭ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।
ইজরায়েল ২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ
থেকে ৩৩৩.৭৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩৪০০ কোটি টাকা) মূল্যের তৈরি পোশাক, পোশাক এবং টেক্সটাইল পণ্য আমদানি করেছে। যার পরিমাণ ২০১৪ তে
ছিল মাত্র ২৫৭৭ ডলার।
অবজারভেটরি অপ ইকুনুমিক কপ্লেক্সেটি এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশ ইসরাইল থেকে ২০২১ সালে
আমদানি করেছে এক
লক্ষ ডলার তার মধ্যে শীর্ষ
পণ্য ডাইং ফিনিশিং এজেন্টের মূল্য ছিল ৪০ হাজার ডলার।
আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত
জাতিসংঘের কমট্রেড ডাটাবেস অনুসারে, ২০২২ সালে
বাংলাদেশে ইসরায়েলের রপ্তানি ছিল এক লক্ষ ৪৯ হাজার ডলার। বাংলাদেশে ইসরায়েল
রপ্তানি - তথ্য, ঐতিহাসিক
চার্ট এবং পরিসংখ্যান - সর্বশেষ আপডেট করা হয়েছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে।
ইসরাইল
থেকে নজরদারি সরঞ্জাম ক্রয়
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাযিরা "ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক" শিরোনামে তাদের একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ গোপনে ইসরায়েলের তৈরি মোবাইল ফোন নজরদারি এবং ম্যানিপুলেশন সরঞ্জাম কিনেছিল যা ব্যবহার করে একই সাথে কয়েকশ লোকের উপর নজরদারি করা যেতে পারে। প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে যে হাঙ্গেরির একটি গুদামঘরে ইসরায়েলি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা কিছু বাংলাদেশি সামরিক কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইসরাইল কর্তৃক
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তি সময়ে যেসব রাষ্ট্র বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয়, ইসরায়েল তাদের মধ্যে অন্যতম। আরব দেশসমূহ স্বীকৃতি দেয়ার আগেই ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ইসরায়েল সরকার এবং ইসরায়েলী নাগরিক সকলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশকে সমর্থন করেছিলো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নতুন স্বাধীনতা লাভকারী বাংলাদেশকে ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রধান করে, যা বাংলাদেশ সরকার নিরপেক্ষভাবে প্রত্যাখ্যান করে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তৎকালীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ একটি চিঠিতে বলেছিলেন যে এই স্বীকৃতি গ্রহণযোগ্য নয়।
বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি বলা হয়। দুইটা জিনিষকে একটি হল রেমিটেন্স অপরটি হল তৈরি পোষাক রপ্তানি। বহির্বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পোশাকের দাম কম। যে পোষাক পাঁচ ডলারে আমিরিকা বাংলাদেশে থেকে তৈরি করে নিয়ে যায় তা আমেরিকায় তাদের বিক্রি ৫০০ ডলারেরও বেশী। কারণ, বাংলাদেশের মতো খুব কম দেশই আছে যেখানে শ্রমিকরা এতো অবহেলিত। যাদেরকে খুব কম টাকায় খাটানো যায় বা সহজে ঠকানো যায় । তাই বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাকের প্রতি চাহিদা অনেক বেশী। অপর দিকে বাংলাদেশ যেরকম পোশাক রপ্তানির জন্য নতুন নতুন বাজারের সন্ধানে ঠিক তেমনি ইসরাইলেরও রয়েছে বাংলাদেশের প্রতি বয়েছে লুলুপ দৃষ্টি। তাই বাংলাদেশর পোশাক শিল্পের প্রতি তাদের আগ্রহ দেখে বাংলাদেশ আস্তে আস্তে তাদের সাথে কৌশলে তাদের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সাভাবিক করতে চাচ্ছে। গবর্নমেন্ট যতই অস্বীকার করুক আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে এমনটাই বুঝে আসে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমাদের কাছে যে
বিষয় গুলো স্পষ্ট হয়েছে তা হলো,
(১) বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত ইসরায়েলকে নৈতিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে না। পৃথিবীর প্রায় ১৯২ টি রাষ্ট্রের মধ্যে ৩০ টি রাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত ইসরাইলেকে স্বীকৃতি দেয়নি বাংলাদেশ তাদের অন্যতম।স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নতুন স্বাধীনতা লাভকারী বাংলাদেশকে ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রধান করে, যা বাংলাদেশ সরকার নিরপেক্ষভাবে প্রত্যাখ্যান করে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তৎকালীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ একটি চিঠিতে বলেছিলেন যে এই স্বীকৃতি গ্রহণযোগ্য নয়।( যার নিজেরই তলা ঠিক নাই সে আবার অন্যকে স্বীকৃতি দেয়। এটা ছিল আসলে বাংলাদেশ থেকে সহজে স্বীকৃতি নেওয়ার একটা পরিকল্পনার অংশ মাত্র )
ধন্যবাদ জানাই তাদেরকে যারা নির্যাতিত ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের মুসলমানদের যে আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা আছে তার যথাযথ মূল্যায়ন করে ছিলেন।
(২) ইসরাইলের সাথে বাংলাদেশের সরাসরি কূটনৈতিক কিংবা
বাণিজ্যিক কোন সম্পর্ক নাই। বাংলাদেশই পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র যেটি ইসরায়েলের
সাথে সকল প্রকার প্রত্যক্ষ বাণিজ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে তাই...
(ক) বাংলাদেশে ইসরাইলি কোন কোম্পানির ব্যবসা-বানিজ্য
যেরকম নেই ঠিক তেমনি ইসরাইলের হয়ে পণ্য প্রস্তুত কারক কোন কোম্পানি বা
ফ্রাঞ্চাইজিও নাই।
(খ) ইসরাইল থেকে সরাসরি প্রস্তুতকৃত পণ্য আমদানি করে
বিক্রি করে এমন কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানও নাই।
(গ) বাংলাদেশে ইসরাইলের সচরাচর কোন পণ্য পাওয়া যায় না।
{তৃতীয় দেশ(বিশেষ করে ভারত) হয়ে আসা সামান্য কিছু
ইসরাইলি পণ্য দেশের অভিজাত কিছু কসমেটিক্সের দোকানে পাওয়া গেলে তাকে সচরাচর বলার
সুযোগ নাই। এর জন্য বিরাট কোম্পানি বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম প্রয়োজন}
(৩) তৃতীয় দেশের মধ্যস্ততায় বাংলাদেশ ইসরাইল থেকে
প্রচুর পরিমাণ তৈরি পোশাক আমদানি করছে যার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।২০১৪ সালে আমদানির
পরিমাণ ছিল ২৫৭৭ ডলার ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৩.৭৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩৪০০ কোটি টাকা)। আর বাংলাদেশের কিছু কোম্পানিও তৃতীয় কোন দেশের মধ্যস্ততায় সামান্য পরিমাণ কাঁচামাল আমাদানি করে থাকে। ২০২২ সালে যার পরিমাণ
ছিল এক লক্ষ ৪৯ হাজার ডলার।
(৪) ইসরাইলের পণ্য বলে প্রচারণা চালানো অধিকাংশ পণ্যই
আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কিংবা জার্মানির ( মালিকানার দৃষ্টিকোণ থেকে।) তবে
কিছু কোম্পানিতে ইয়াহুদি এবং জায়নবাদিদের শেয়ার আছে। এটা অস্বীকার করার কোন জো নেই।
তাই বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ইসরাইলকে অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করার কার্যকরী এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হল তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ইসরাইল থেকে
ক্রমবর্ধমান আমাদানি বিশেষ করে রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া। আমদানি বন্ধের মাধ্যমে তো
ইসরাইলের ক্ষতি এখনো পর্যন্ত খুব কম কিন্তু তৈরি পোশাক রপ্তানি বন্ধ করে দিলে এতে
বছরে হাজার হাজার কোঁটি টাকা তাদের গচ্চা যাবে এটা আমি একরকম নির্দ্বিধায় বলতে
পারি। কারণ, বাংলাদেশের মতো এত সস্তা আর কোন দেশ থেকে উন্নত মানের
পোশাক আর কারো থেকে আমদনি করা ইসরাইলের জন্য সম্ভব হবে না।
পরিশেষে বলতে চাই ইসরাইলের সাথে ক্রমবর্ধমান এই ব্যবসা-বাণিজ্য যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে ইসরাইলের সাথে বাংলাদেশের শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়েই উঠাবেই তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাই অযথা আবেগের পিছনে না দৌড়িয়ে বিবেককে কাজে লাগান। ইসরাইলের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের এই ক্রমবর্ধমান শিথিলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। গন আন্দোলন গড়ে তুলুন। আওয়াজ তুলুন এই বর্বর নরপশুদের সাথে সকল ধরণের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য বাণিজ্যের বিরুদ্ধে। শেখ সাদী (রহ,) বলে গেছেন,
"ঝর্ণার মূখ ছোট থাকতেই
তাকে বন্ধ করে দাও অন্যথায় তা বড় হয়ে গেলে বিরাট আকারের হাতিকেও ভাসিয়ে নিয়ে যাবে"
মারকাযুল বহূস আল ইসলামিয়া ঢাকা।মিরপুর-১ ঢাকা-১২১৬
মুহাদ্দিসঃ দারুল উলূম ফজলিয়া কওমিয়া মাদ্রাসা,পদ্মা সেতু ,শরিয়তপুর।
0 মন্তব্যসমূহ