আমার মাদ্রাসায় (যেখানে পড়াই,শরীয়তপুর)
পরিক্ষা চলছে। হঠাত মেজ ভাই কাউসার বিন হুসাইন এর সাথে আমাদের সকলের মহাব্বতের মানুষ বিনোদন সম্রাট মহিউদ্দীন হাসান খান সাহেবের আগমন। সোজা কথা পরের দিন যত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাই হোক না কেন ছাত্ররা
এরকম একজন মজার মানুষ পেয়ে এভাবে ছেড়ে দিবে এর কল্পনাও করা মুশকিল ছিল। ফলে যা
হওয়ার তাই হল, দাওরা থেকে নিয়ে নীচের জামাত
পর্যন্ত ধারাবাহিক অনুরোধ আসতে থাকল কিছু সময় খান সাহেবকে তাদের মাঝে কথা বলতে
দেওয়ার জন্য। বাদ এশা মাদ্রাসার সকল ছাত্রদেরকে একত্রিত করে কিছু কথা বলার জন্য
খান সাহেবকে অনুরোধ করলাম।
ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বিনোদনের আড়ালে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়ে গেলেন যা ছাত্রদেরকে তো বটেই
আমাদেরকেও খুব মুগ্ধ করল। মৌলিক তিনটি বিষয় আলোচনা
করলেন। কথাগুলো ভালো লেগেছে তাই এখানেও তার চুম্বক অংশ
তুলে ধরলাম।
১। মাদ্রাসার ছাত্র হয়ে নিজেকে কখনো ছোট মনে করবে না হীনমন্যতায় ভুগবে না। এই বিশ্বাস সব সময় রাখবে তোমরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী। ওস্তাদরা
তোমাদেরকে স্কুল কলেজের ছাত্রদের মতো স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দেয় না কারণ
তোমাদের দাম অনেক বেশি আর দামি জিনিসকে মানুষ খুব যত্ন
সহকারে রাখার চেষ্টা করে অবহেলা করে নয়। যেমন স্বর্ণরুপা, মনি মুক্তা, এগুলো দামী
হওয়ার কারণে সংরক্ষণ পদ্ধতি খুবই রক্ষণশীল হয়। পক্ষান্তরে মূল্যহীন জিনিস কে
মানুষ যেখানে সেখানে ফেলে রাখ।
২। নিজের ভিতরে যত কিছু জানার
আগ্রহ জন্মাবে সব ওস্তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবে। এতে
তোমার এলেম বৃদ্ধি পাবে সাথে সাথে ওস্তাদের সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। যা
তোমার জীবনে বড় সম্পদ হয়ে থাকবে। উস্তাদের সম্মান এবং মর্যাদার
প্রতি খুবই যত্নশীল হবে । এগুলোই মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। যা
থেকে স্কুল কলেজের ছাত্ররা একেবারেই বঞ্চিত।
৩। ছোট বাচ্চারা যখন তোমাদের
সামনে দাঁড়িয়ে কোন কিছু পড়বে বলবে অথবা শুনাবে এতে যদি তার কোন ভুল হয় তাহলে তাকে নিয়ে হাসাহাসি, কটাক্ষ কিংবা তিরস্কার করবে না। বরং মাশাল্লাহ
মারহাবা ইত্যাদি বলে তাকে উৎসাহিত করবে। এতে তার মনোবল বৃদ্ধি পাবে এবং ভবিষ্যতে তার সুপ্ত প্রতিভা গুলোকে
বিকাশ করার অধম্য সাহস তৈরি হবে। আর যদি তোমরা হাসাহাসি করো
তাহলে সে আর সামনে অগ্রসর হতে পারবে না তার প্রতিভাগুলো
অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে যাবে।
খান সাহেবকে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে খুব কাছে থেকে দেখেছি। বাস্তব জীবনে তিনি খুবই
মিশুক এবং অমায়িক একজন মানুষ। কাছে থাকা কারোর কাছেই বিষয়টি অজানা নয়। মিডিয়ার
জগতে তিনি একজন অকুতোভয় সৈনিক। নাস্তিক মুরতাদ, আহলে হাদিস, হেযবুত তাওহীদ, বেদায়াতি, ভন্ড মাজার
পূজারীরা সহ সব ধরনের বাতিলদের বিরুদ্ধে তার বক্তব্য খুবই প্রতিক্রিয়াশীল। ( তবে
সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখার জন্য মিউজিকসহ কিছু বিষয়ে অবশ্যই সংশোধন কাম্য।)
দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা তাকে
হযরত হাসসান বিন সাবেত (রাযিঃ) এর মত বাতিলদেরকে বিভিন্ন কথামালা, কবিতা, আবৃত্তির মাধ্যমে
আরো ব্যপকভাবে তুলোধুনা করা তাওফিক দান করেন। এবং জায়েযের মধ্যে থেকে আমাদেরকে
মিউজিক মুক্ত বিনোদন দেওয়ার মাধ্যমে বাতিলের সকল পরিকল্পনা
এবং বিভ্রান্তকারী সকল কার্যক্রম কে মানুষের সামনে হাসি
ঠাট্টা বস্তুতে পরিণত করার সামর্থ দান করুন।
তার ইলম ও আমল-আখলাককে পরিপূর্ণভাবে বিশুদ্ধ করে দিয়ে সাধ্য অনুযায়ী জায়েজ সকল পন্থা অবলম্বন করে এই অঙ্গনে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দেন। আমীন।
0 মন্তব্যসমূহ