সহিহ হাদিসের আলোকে "ব্রাদার রাহুল হোসেন" কেয়ামতের আলামত প্রমাণিত হয় যেভাবে!

কেয়ামতের অন্যতম একটি আলামত হল মূর্খদেরকে আলেমদের মর্যাদা দেওয়া এবং নেতা হিসেবে গ্রহণ করা। সমাজে যেন আজ রসুলের সেই স্বর্ণালী বানীর বাস্তবতা খুব দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। এতদিন এই হাদিসের বাস্তবতা একটু দূরবর্তী মনে হলেও আমাদের আহলে হাদিস ভাইয়েরা যেন তা বাস্তবায়নের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।

১. হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنّ اللهَ لاَ يَقْبِضُ العِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ العِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ العِلْمَ بِقَبْضِ العُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتّخَذَ النّاسُ رُءُوسًا جُهّالًا، فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلّوا وَأَضَلّوا.

অর্থ:নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ইলমকে মানুষদের থেকে ছিনিয়ে তুলে নেবেন না। তবে তিনি ইলমকে উঠিয়ে নেবেন আলেমদেরকে উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে। একপর্যায়ে যখন (দুনিয়াতে) কোনো আলেম অবশিষ্ট থাকবে না তখন মানুষেরা মূর্খদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করবে। অতঃপর তাদেরকে যখন (দ্বীনের কোনো বিষয়ে) জিজ্ঞাসা করা হবে; তারা না জেনে উত্তর দেবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১০০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৭৩

২. হযরত আবু উমামা রা. বর্ণনা করেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দুই ব্যক্তির আলোচনা করা হল। তাদের একজন ছিল আলেম অপরজন আবেদ। তখন নবীজী ইরশাদ করলেন-

فَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ.

আবেদের (আলেম নয় এমন ইবাদাতগুযার নেককার ব্যক্তি) উপর আলেমের মর্যাদা তোমাদের একজন সাধারণ ব্যক্তির উপর আমার মর্যাদার ন্যায়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৮৫

৩. আরো ইরশাদ করেন-

إِنّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ، إِنّ الْأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلَا دِرْهَمًا، إِنّمَا وَرّثُوا الْعِلْمَ، فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ.

নিশ্চয় আলেমগণ নবীগণের ওয়ারিশ। আর নবীগণ দিনার-দিরহামের (অর্থ-সম্পদের) ওয়ারিশ বানান না। তাঁরা ওয়ারিশ বানান ইলমের। সুতরাং যেই ব্যক্তি তা গ্রহণ করল সে তো (মিরাছের) এক বিরাট অংশ গ্রহণ করল। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২২৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৭১৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৪১

শরীয়তে আলেম-ওলামাদের মর্যাদা কি পরিমান দেওয়া হয়েছে এই হাদিসগুলোর সামনে রাখলে সেটা আর অস্পষ্ট থাকার কথা নয়। কিছু মানুষের কথাবার্তা এবং মন্তব্য দেখলে মনে হয়, আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসূলের জন্য আলেম ওলামাদের এই সম্মান এবং মর্যাদা ঠিক হয়নি। এটা মূলত ব্রাদার রাহুলদের মত তোতা পাখি শায়খদেরই প্রাপ্য ছিল। নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক।

৪. আল্লাহতালা ইরশাদ করেন,

یَرۡفَعِ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ ۙ وَالَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ دَرَجٰتٍ ؕ وَاللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন। তোমরা যা-কিছু কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে পরিপূর্ণ অবগত। আল মুজাদালাহ্‌ - ১১

আচ্ছা ভাই! আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যাদেরকে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন সেটা আমি আর আপনি স্বীকার করতে এত কৃপণতা কেন? এর কারণ, কোরআন হাদিসের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের ঘাটতি ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়। বুঝে আসুক আর না আসুক আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কথা বিনা বাক্যে মেনে নেওয়া এটাই কি একজন ব্যক্তি মুসলিম বিবেচিত হবার পূর্ব শর্ত নয়?

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সরল সোজা পথ সিরাতে মুস্তাকিমের উপর চলা সহজ করে দিন।

মারুফ বিল্লাহ

৪ ই শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী


0 মন্তব্যসমূহ